এক:
অপু ও তপু দুই বন্ধু। তারা স্কুলের দিকে হাঁটছে। এমনিতেই মেঘের দিন তারপর আবার বৈশাখ মাস। হঠাৎ করে আকাশ কালো হয়ে এলো। কিছুক্ষন পড়েই শুরু হলো ঝড়ের ভয়াবহ হুঙ্কার। সেই হুঙ্কারে পৃথিবী কাঁপতে শুরু করল। অপু ও তপু বুঝতে পারল দিনের অবস্থা খুবই খারাপ। তাই তারা দৌড়াতে শুরু করল। কিন্তু, দৌড়ালে কি হবে শুরু হয়ে গেল প্রবল ঝড়। পড়তে শুরু করল বড় বড় শিলাখন্ড। অপু ও তপু দুজনেই একটি বড় আম গাছের নিচে এসে দাঁড়াল। দিন আরো কালো হয়ে গেল। বাতাসের প্রবল ধাক্কায় আমগাছটির একটি ডাল ভেঙ্গে নিয়ে গেল। এভাবে একটানা এক ঘণ্টা তুফান চলল। তুফান থামার পর অপু ও তপু গাছের নিচ থেকে চলে এলো। তারপর আবার তারা স্কুলের দিকে হাঁটতে শুরু করল। তারা দেখতে পেল আশেপাশের সব গাছগুলো লণ্ড-ভণ্ড হয়ে গেছে। স্কুলে এসে দেখা একই অবস্থা। স্কুলে কোন ছাত্র-শিক্ষকের পাত্তা নাই। স্কুলের টিন বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। তখন তারা পুনরায় বাড়ির পথ ধরল। তপু তার বাড়ি পর্যন্ত এসে বলল, “বাড়িতে চলে যাই, আজতো আর ক্লাস হলো না।” কথাটি বলে তপু বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল। অপুও আস্তে আস্তে হেটে বাড়ি চলে গেল।
দুইঃ
রাত্রিবেলা। অপু ভাবে সে পহেলা বৈশাখের দিন কি কি করেছিল।
পহেলা বৈশাখের দিন সকাল থেকেই অপু ও তপু দুজনেই ব্যস্ত কিভাবে তারা মেলায় একটা দোকান বসাবে। কারণ, তাদের এলাকার বট গাছের নিচে এক বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় একটি যাত্রাপালা হবে। যাত্রাপালার নাম “কারণ মাঝি”, লেখক আমি নিজেই। এলাকার এবং বাহিরের অনেক লোক এই মেলায় দোকান নিয়ে বসেছে। অপু তপুকে বলে উঠল, “বাইরের লোক এহানে দোহান দেবে, আর আমরা গেরামের ছেলে হয়ে দোহান দিতে পারুমনা, এইটা কি অয়?” তারা দুইজন অনেক বুদ্ধি-সুদ্ধি করে একটি পান্তা ভাতের দোকান খুলে বসল।
কবিমন বলে উঠেঃ
“পান্তা ভাত আর ইলিশ ভাঁজা,
একসাথে খেতে ভারী মজা।
যদি দাম হয় আরও কম,
খাওয়া চলবে হরদম।”
অনেকেই বিশ টাকা দিয়ে তাদের দোকান থেকে পেটপুরে পান্তাভাত খেয়ে গেল। সারাদিন তারা প্রায় দুইশো টাকার মত লাভ করল। তারা ভাবল এই টাকার কিছু অংশ দিয়ে তারা যাত্রাপালা দেখবে। তারা “কারণ মাঝি ” যাত্রা পালার কিছু কাহিনী শুনেছে। কিভাবে কারণ মাঝিকে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। তারপর তাকে কি কারণে নরকের নদী পারাপারের মাঝি বানানো হয়েছিল। নাটকটিতে কারণ মাঝির কিছু রোমান্সের কাহিনীও আছে। তারা ঠিক করল নাটক দেখের পর বাকি যা টাকা থাকবে তা তারা দুজনে ভাগ করা নেবে। কিন্তু, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সন্ধ্যার দিকে আকাশে মেঘ জমে গেল। যাত্রাপালার পেন্ডেলের ভেতর দর্শকরা সবাই বসল। হঠাৎ সেই কালো মেঘে সারা আকাশ ছেয়ে গেল। গুড়ুম গুড়ুম শব্দে আকাশে বাজ পড়তে শুরু করল। সাথে শিলা বৃষ্টি। সবাই মেঘের এই তর্জন গর্জন দেখা পেন্ডেল ছেড়ে দৌড় দিলো। হঠাৎ প্রবল একটা বাতাসের ধাক্কায় মঞ্চের উপরের টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেল। শুরু হলো প্রবল কাল বৈশাখী ঝড়। অপু, তপু ভিজে চুপসে গেল। তারা অনেক কষ্টে বাড়ি পৌছাল।
তিনঃ
পহেলা বৈশাখের সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়েছিল কালো বৈশাখী ঝড়। তারপর থেকে প্রতি দিনই ঝড় হয়। প্রায়ই বজ্রপাত হয়। তাই, সবাই ঝড়ের আভাস পেলেই ঘরে ফিরে যায়। অপু তপু প্রতিদিনই মাঠে গোল্লাছুট খেলতে যায়। তারা দুজনেই পড়ালেখায় খুব কাঁচা। সারাদিন খেলায় মত্ত থাকে। একদিন তারা খেলাধুলা করে বাড়ির দিকে ফিরছিল। তারা একটি প্রকাণ্ড ঘুড়ি আকাশে ভাসিয়ে হাটতে থাকছিল। এমন সময় তারা অনেক দুর থেকে ভেসে আসা শো শো শব্দ শুনতে পেল। তারা তখন বুঝতে পারেনি এটা কিসের পূর্বাভাস। তারা তাদের ঘুরিতে প্রচণ্ড টান অনুভব করল। দূর থেকে ভেসে আসা শব্দটি আরো নিকটবর্তী হতে শুরু করল। তখন তারা বুঝতে পারল বাতাস বেশ জোড়ে বইছে। এই বাতাসে ঘুড়ি নিচে নামানো সম্ভব নয়। তখন তপু অপুর হাত থেকে ঘুড়ির নাটাইটি নিলো। শো শো শব্দটি একেবারে নিকটবর্তী হল। আকাশ কলো মেঘে ছেয়ে গেল। অপু বাড়ির দিকে দৌড় শুরু করল। কিন্তু, তপু! আর বাড়ির দিকে দৌড় দিতে পারলনা। কারণ, ঘুড়ির রশিটি ছিলো খুব শক্ত সুতোর। সেই সুতো তপু তার হাতে শক্ত ভাবে পেঁচিয়ে নিয়েছিল। বাতাসে ছিলো প্রবল টান। সেই বাতাস একটি কড়ই গাছকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ঘুড়ির সাথে বাতাস তপুকেও উড়িয়ে নিয়ে গেল। সেই বাতাস তপুকে আর ফিরিয়ে দিয়ে গেলনা।
চারঃ
অনেক বছর হয়ে গেল তপু মারা গেছে। তপু মারা যাওয়ার পর অপু আর কোন সময় খেলাধূলা নিয়ে মত্ত হয়নি। অপু তখন থেকেই পড়ালেখায় মনোনিবেশ করেছিল। অপু এখন পদার্থ বিজ্ঞানে মাস্টার্সে পড়তেছে। যখনই বৈশাখ মাস আসে তখনই অপুর মনে পরে যায় তার বন্ধু তপুর কথা। তখন তার মনে এসে যায় সেই চিরচেনা, “আকাশে জমেছে মেঘ” ।
অপু ও তপু দুই বন্ধু। তারা স্কুলের দিকে হাঁটছে। এমনিতেই মেঘের দিন তারপর আবার বৈশাখ মাস। হঠাৎ করে আকাশ কালো হয়ে এলো। কিছুক্ষন পড়েই শুরু হলো ঝড়ের ভয়াবহ হুঙ্কার। সেই হুঙ্কারে পৃথিবী কাঁপতে শুরু করল। অপু ও তপু বুঝতে পারল দিনের অবস্থা খুবই খারাপ। তাই তারা দৌড়াতে শুরু করল। কিন্তু, দৌড়ালে কি হবে শুরু হয়ে গেল প্রবল ঝড়। পড়তে শুরু করল বড় বড় শিলাখন্ড। অপু ও তপু দুজনেই একটি বড় আম গাছের নিচে এসে দাঁড়াল। দিন আরো কালো হয়ে গেল। বাতাসের প্রবল ধাক্কায় আমগাছটির একটি ডাল ভেঙ্গে নিয়ে গেল। এভাবে একটানা এক ঘণ্টা তুফান চলল। তুফান থামার পর অপু ও তপু গাছের নিচ থেকে চলে এলো। তারপর আবার তারা স্কুলের দিকে হাঁটতে শুরু করল। তারা দেখতে পেল আশেপাশের সব গাছগুলো লণ্ড-ভণ্ড হয়ে গেছে। স্কুলে এসে দেখা একই অবস্থা। স্কুলে কোন ছাত্র-শিক্ষকের পাত্তা নাই। স্কুলের টিন বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। তখন তারা পুনরায় বাড়ির পথ ধরল। তপু তার বাড়ি পর্যন্ত এসে বলল, “বাড়িতে চলে যাই, আজতো আর ক্লাস হলো না।” কথাটি বলে তপু বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল। অপুও আস্তে আস্তে হেটে বাড়ি চলে গেল।
দুইঃ
রাত্রিবেলা। অপু ভাবে সে পহেলা বৈশাখের দিন কি কি করেছিল।
পহেলা বৈশাখের দিন সকাল থেকেই অপু ও তপু দুজনেই ব্যস্ত কিভাবে তারা মেলায় একটা দোকান বসাবে। কারণ, তাদের এলাকার বট গাছের নিচে এক বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় একটি যাত্রাপালা হবে। যাত্রাপালার নাম “কারণ মাঝি”, লেখক আমি নিজেই। এলাকার এবং বাহিরের অনেক লোক এই মেলায় দোকান নিয়ে বসেছে। অপু তপুকে বলে উঠল, “বাইরের লোক এহানে দোহান দেবে, আর আমরা গেরামের ছেলে হয়ে দোহান দিতে পারুমনা, এইটা কি অয়?” তারা দুইজন অনেক বুদ্ধি-সুদ্ধি করে একটি পান্তা ভাতের দোকান খুলে বসল।
কবিমন বলে উঠেঃ
“পান্তা ভাত আর ইলিশ ভাঁজা,
একসাথে খেতে ভারী মজা।
যদি দাম হয় আরও কম,
খাওয়া চলবে হরদম।”
অনেকেই বিশ টাকা দিয়ে তাদের দোকান থেকে পেটপুরে পান্তাভাত খেয়ে গেল। সারাদিন তারা প্রায় দুইশো টাকার মত লাভ করল। তারা ভাবল এই টাকার কিছু অংশ দিয়ে তারা যাত্রাপালা দেখবে। তারা “কারণ মাঝি ” যাত্রা পালার কিছু কাহিনী শুনেছে। কিভাবে কারণ মাঝিকে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। তারপর তাকে কি কারণে নরকের নদী পারাপারের মাঝি বানানো হয়েছিল। নাটকটিতে কারণ মাঝির কিছু রোমান্সের কাহিনীও আছে। তারা ঠিক করল নাটক দেখের পর বাকি যা টাকা থাকবে তা তারা দুজনে ভাগ করা নেবে। কিন্তু, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সন্ধ্যার দিকে আকাশে মেঘ জমে গেল। যাত্রাপালার পেন্ডেলের ভেতর দর্শকরা সবাই বসল। হঠাৎ সেই কালো মেঘে সারা আকাশ ছেয়ে গেল। গুড়ুম গুড়ুম শব্দে আকাশে বাজ পড়তে শুরু করল। সাথে শিলা বৃষ্টি। সবাই মেঘের এই তর্জন গর্জন দেখা পেন্ডেল ছেড়ে দৌড় দিলো। হঠাৎ প্রবল একটা বাতাসের ধাক্কায় মঞ্চের উপরের টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেল। শুরু হলো প্রবল কাল বৈশাখী ঝড়। অপু, তপু ভিজে চুপসে গেল। তারা অনেক কষ্টে বাড়ি পৌছাল।
তিনঃ
পহেলা বৈশাখের সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়েছিল কালো বৈশাখী ঝড়। তারপর থেকে প্রতি দিনই ঝড় হয়। প্রায়ই বজ্রপাত হয়। তাই, সবাই ঝড়ের আভাস পেলেই ঘরে ফিরে যায়। অপু তপু প্রতিদিনই মাঠে গোল্লাছুট খেলতে যায়। তারা দুজনেই পড়ালেখায় খুব কাঁচা। সারাদিন খেলায় মত্ত থাকে। একদিন তারা খেলাধুলা করে বাড়ির দিকে ফিরছিল। তারা একটি প্রকাণ্ড ঘুড়ি আকাশে ভাসিয়ে হাটতে থাকছিল। এমন সময় তারা অনেক দুর থেকে ভেসে আসা শো শো শব্দ শুনতে পেল। তারা তখন বুঝতে পারেনি এটা কিসের পূর্বাভাস। তারা তাদের ঘুরিতে প্রচণ্ড টান অনুভব করল। দূর থেকে ভেসে আসা শব্দটি আরো নিকটবর্তী হতে শুরু করল। তখন তারা বুঝতে পারল বাতাস বেশ জোড়ে বইছে। এই বাতাসে ঘুড়ি নিচে নামানো সম্ভব নয়। তখন তপু অপুর হাত থেকে ঘুড়ির নাটাইটি নিলো। শো শো শব্দটি একেবারে নিকটবর্তী হল। আকাশ কলো মেঘে ছেয়ে গেল। অপু বাড়ির দিকে দৌড় শুরু করল। কিন্তু, তপু! আর বাড়ির দিকে দৌড় দিতে পারলনা। কারণ, ঘুড়ির রশিটি ছিলো খুব শক্ত সুতোর। সেই সুতো তপু তার হাতে শক্ত ভাবে পেঁচিয়ে নিয়েছিল। বাতাসে ছিলো প্রবল টান। সেই বাতাস একটি কড়ই গাছকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ঘুড়ির সাথে বাতাস তপুকেও উড়িয়ে নিয়ে গেল। সেই বাতাস তপুকে আর ফিরিয়ে দিয়ে গেলনা।
চারঃ
অনেক বছর হয়ে গেল তপু মারা গেছে। তপু মারা যাওয়ার পর অপু আর কোন সময় খেলাধূলা নিয়ে মত্ত হয়নি। অপু তখন থেকেই পড়ালেখায় মনোনিবেশ করেছিল। অপু এখন পদার্থ বিজ্ঞানে মাস্টার্সে পড়তেছে। যখনই বৈশাখ মাস আসে তখনই অপুর মনে পরে যায় তার বন্ধু তপুর কথা। তখন তার মনে এসে যায় সেই চিরচেনা, “আকাশে জমেছে মেঘ” ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন